ঢাকা     ১৯ মার্চ ২০২৪ ||  ৫ চৈত্র ১৪৩০

Biz Tech 24 :: বিজ টেক ২৪

উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়: পাঁচ মাসে ভর্তুকি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা

বিজটেক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ২৩ নভেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৩:১৪, ৩০ নভেম্বর ২০২০

উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়: পাঁচ মাসে ভর্তুকি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা

ভাড়াভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনায় বিপুল অর্থ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। মে থেকে সেপ্টেম্বর—পাঁচ মাসে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি ২ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। 

সম্প্রতি মে, জুন ও জুলাইয়ের জন্য ভর্তুকি বাবদ টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ। অর্থ ছাড়পত্রে বলা হয়, ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্লান্ট (আইপিপি), রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মে, জুন ও জুলাইয়ের বিল পরিশোধের জন্য ২ হাজার ৩৬৩ কোটি ২ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরের বিদ্যুৎ ভর্তুকি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ হতে বিপিডিবির অনুকূলে ছাড়া করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এছাড়া আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের জন্য আরো ১ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা ছাড়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সব মিলিয়ে মাত্র পাঁচ মাসেই এ খাতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি ২ লাখ টাকা। 

অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ভর্তুকি বাবদ যে বরাদ্দ রাখা হয় তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। তাই পরবর্তী বাজেটের অর্থ দিয়ে আগের বাজেটের চাহিদা মেটাতে হয়। 

গত বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আট মাসেই সে টাকা শেষ হয়ে যায়। তাই অর্থবছরের বাকি চার মাসের (মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন) ভর্তুকি চলতি বাজেটের বরাদ্দ থেকে দেয়া হচ্ছে। মে, জুন ও জুলাইয়ের বিল পরিশোধের জন্য সম্প্রতি ২ হাজার ৩৬৩ কোটি ২ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ থেকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইপিপি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বিল পরিশোধে ভর্তুকি বাবদ আরো ১ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। যাচাই-বাছাই শেষে এ অর্থ ছাড় করবে অর্থ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৫৪৮ মেগাওয়াট। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৩ হাজার মেগাওয়াটের কম। অর্থাৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎও উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে অলস বসিয়ে রাখতে হচ্ছে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বেসরকারি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও চুক্তি অনুযায়ী ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। গত এক দশকের বেশি সময়ে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দেয়া এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

ঘাটতি মেটাতে বিপিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৫৬ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। এর পরও এক দশকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে নয়বার। এতে বিদ্যুতের গড় দাম বেড়ে গেছে প্রায় ৯১ শতাংশ। যদিও এক দশকের মধ্যে কয়েকবার বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমেছে। এর মধ্যে গত দুই বছর টানা কমছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়। তবে এর কোনো প্রভাব নেই বিদ্যুতের দামে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে লোকসান ও দাম বাড়ার পেছনে রয়েছে মূলত দুটি কারণ। এর প্রথমটি হলো অদক্ষ উৎপাদন ব্যবস্থা। এতে সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। দ্বিতীয় কারণটি হলো বেসরকারি খাতে বিশেষত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ। এ চার্জকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনলে বিদ্যুৎ খাতে লোকসান অনেক কমে যাবে।

সম্প্রতি সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যান রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র সময়মতো চালু করতে না পারায় রেন্টাল প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। তবে আগামী বছরের মধ্যে অধিকাংশ রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বন্ধ করে দেয়া হবে। নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট ভিত্তিতে দু-একটি গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল কেন্দ্র থাকবে।