করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যেখানে অস্থির বিশ্ব বাণিজ্য, সেখানে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মতো রপ্তানি আয়েও বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে অর্থবছরের প্রথম মাসে। জুলাইয়ে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ (প্রায় ৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। যা গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।
মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। ইপিবি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো মাসে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আয় হয়েছিল ৩৪৭ কোটি ৩৪ লাখ (৩.৪৭ বিলিয়ন) ডলার। তবে জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। গত জুনে ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৫২ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। সরকার নতুন অর্থবছরে (২০২২-২৩) রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে ৫৮ বিলিয়ন ডলার । মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই জুলাই মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্যমতে, জুলাইয়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। যার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। আর ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে নতুন অর্থবছরে পাট খাতেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ১০ হাজার ডলার দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। অন্যান খাতের মধ্যে জুলাইয়ে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য, ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৯ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। ওষুধ রপ্তানি থেকে এসেছে ১ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
এছাড়া, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বাইসাইকেল থেকে ১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ডলার, ক্যাপ বা টুপি থেকে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, প্লাষ্ট্রিক পণ্য থেকে ১ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং হ্যান্ডিক্যাফট রপ্তানি থেকে ২৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
এদিকে, জুলাই মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২১০ কোটি ডলার। যা ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সে হিসাবে জুন অপেক্ষা জুলাই মাসে ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্থির পুরো বিশ্ব বাণিজ্য এবং কোরবানির ঈদের ছুটির কারণে আট-দশ দিন পোশাক কারখানাসহ অন্য সব কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও অর্থনীতির প্রধান দুই সূচকে এই উল্লম্ফন দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। বর্তমানে এই সঙ্কটের সময় রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়াটা খুবই দরকার ছিল। এর মধ্য দিয়ে রিজার্ভ বাড়বে। ডলারের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে, সেটাও কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।