
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডি বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে ধস নেমেছে প্রবাসী আয়ে। এতে শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ হুন্ডি বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে বিকাশের একাউন্ট। মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) প্রায় পাঁচ হাজার এজেন্টকে নজরদারিতে রেখেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এরমধ্যে বেশির ভাগই বিকাশের একাউন্ট।
ডিজিটাল হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এরইমধ্যে বিকাশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রায় ৩০০ এজেন্টের সিম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন ডিসট্রিবিউটরের লেনদেন কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে এসএম মনি মুক্তা ট্রেডার্স নামে বিকাশ এজেন্টের হিসাব নম্বরে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে ছয় হাজার ৪৭৯টি লেনদেন হয়েছে। আর এর মাধ্যমে পাঁচ কোটি ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৫৩ টাকা ক্যাশ ইন হয়। একই এলাকার বিকাশ এজেন্ট ‘সানজিদা এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘আকরাম ফার্মেসি’র এজেন্ট হিসাব নম্বরে ওই চার মাসে মোট ছয় কোটি ৫৮ লাখ চার হাজার ৪৩৮ টাকা ক্যাশ ইন করা হয়। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানেরই মালিক কুমিল্লার মুরাদনগরের মো. আব্দুল বাছির। তিনি এই টাকার অধিকাংশই প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আত্মীয়স্বজনদের বিকাশ হিসাবে ক্যাশ ইন করেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার বিকাশ এজেন্ট ‘জয় কম্পিউটার’-এর এজেন্ট হিসাব নম্বরে গত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সাত হাজার ৮২৫টি লেনদেনের মাধ্যমে ছয় কোটি ছয় লাখ ২৪ হাজার ৮৫৪ টাকা ক্যাশ ইন করা হয়। এই এজেন্ট নম্বরটির অধিকাংশ ক্যাশ ইন করা হয় প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আত্মীয়স্বজনদের বিকাশ হিসাবে।
রাজধানীর গুলশান থানা এলাকার শাহজাদপুরের আবুল হাসান নামে এক বিকাশ এজেন্টের ‘নাবিল কালেকশন’-এর হিসাব থেকে তিন মাসে ছয় কোটি ৫৯ লাখ টাকা ক্যাশ ইন হয়েছে। আর মোহাম্মদপুরে ফজলে রাব্বি নামে আরেক বিকাশ এজেন্ট রাব্বি টেলিকমের হিসাব থেকে তিন মাসে ক্যাশ ইন হয়েছে ছয় কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এসব টাকার অধিকাংশ প্রবাসীদের স্বজনদের হিসাব নম্বরে ক্যাশ ইন করা হয়েছে।
এসব ঘটনায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে আলাদা চারটি মামলা হয়েছে। মামলায় ৪৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের টাকা ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসার তথ্য উঠে এসেছে। এসব নম্বরের বেশির ভাগই বিকাশের। তদন্ত শেষে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, বিকাশ বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নির্দেশনা শতভাগ মেনে চলে। আমাদের সব এজেন্ট, কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্টদের বাধ্যতামূলকভাবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি মাসেই কোনো না কোনো জেলায় আমাদের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান আছে। যদি কোনো এজেন্ট বা গ্রাহকের হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন হয় বিকাশ স্বপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য দেয়। তারা এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানায়। ইতোপূর্বে এমন সন্দেহজনক হিসাবের তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। অপব্যবহার রোধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি অনুসরণ করে বিকাশ।