দেশের সর্বস্তরের জনগণকে পেনশন কাঠামোর অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ’ গঠন করেছে সরকার। সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ এর ৪(১) ধারা অনুযায়ী এ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রোববার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩–এর আওতায় এই কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে সোমবার। প্রজ্ঞাপনে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, সিদ্ধান্তটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস হয়। এর মাধ্যমে ৬০ বছর পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন নাগরিকরা। এই সুবিধা পেতে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকদের নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে হবে। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্বরাও এই আইনের আওতায় নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।
এর আওতায়, ১৮-৫০ বছরের নাগরিকরা মাসিক ৫০০ টাকা চাঁদার বিপরীতে ৬০ বছর বয়সে মাসিক ৩৪ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। আর মাসিক এক হাজার টাকা চাঁদার বিপরীতে পাবেন ৬৪ হাজার টাকা। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও নিবন্ধনের মাধ্যমে পেনশন ব্যবস্থায় যুক্ত হতে পারবেন।
পেনশন আইনে বলা হয়েছে, একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। তবে পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতা ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
এছাড়া পেনশনের জন্য জমা দেওয়া অর্থ, কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন, যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে।
পেনশন ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে বিলে। এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এতে সদস্য হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি এবং উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। আর পর্ষদের সদস্য সচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।