জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়ংকর হুমকির মুখে রয়েছে এশিয়ার পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলো। কেবল তীব্র দাবদাহ এবং বন্যার কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হারাতে পারে এ অঞ্চলের চারটি দেশ, যার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা শ্রোডারস এবং নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক এই তথ্য। -খবর রয়টার্সের।
প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম- এই চার দেশে কার্যক্রম চালানো ছয়টি বৈশ্বিক পোশাক ব্র্যান্ডের সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা চালানো হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরী আবহাওয়ার কারণে কেবল এশিয়ান অ্যাপারেল হাব নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্বের সবচেয়ে সুপরিচিত ৬টি তৈরি পোশাকের ব্র্যান্ডও। ব্র্যান্ডগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে জানা গেছে— বর্তমান বিশ্বে প্রতিদিন তৈরি পোশাক থেকে যে মুনাফা আসে, তার একই উল্লেখযোগ্য অংশ যায় এই ছয় ব্র্যান্ডের ব্যাংক হিসাবে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে দীর্ঘ টানা তাপপ্রবাহ ও প্রবল বর্ষণ দেখা গেলেও মৌসুমি জলবায়ুপ্রধান দেশগুলোতে এসব দুর্যোগের হার অনেক বেশি। গবেষণা প্রতিবেদনটির মূল বক্তব্য হলো, আগামী সাত বছরে তাপপ্রবাহ বা অতি গরম বা তাপ প্রবাহ এবং অতি বর্ষণজনিত কারণে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে গার্মেন্ট মালিক এবং শ্রমিক উভয়কেই। এই দুই প্রাকৃতিক দুর্যোগের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উৎপাদনে। অতি গরম বা টানা দীর্ঘ তাপপ্রবাহের কারণে একদিকে শ্রমিকদের উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পাবে, অন্যদিকে অতিবর্ষণ ও তার ফলে সৃষ্ট বন্যা ও জলাবদ্ধতাও উৎপাদনের কাঙিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আর এসব সংকটই আগামী ৫ বছরে সাড়ে ৬ হাজার কোটি ডলার লোকসানের দিকে নিয়ে যাবে বাংলাদশসহ এশিয়ার অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থনৈতিক খাতকে।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য জ্যাসন জাড জানিয়েছেন, গবেষণার স্বার্থে বেশ কয়েক জন সরবরাহকারী/উদ্যোক্তা ও বায়ারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে জলবায়ু পরিবর্তন, তার ফলে সৃষ্ট তাপপ্রবাহ- বন্যা এবং এসবের জেরে সম্ভাব্য লোকসান নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন কোনো সচেতনতা নেই।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এই ধারণাটি একেবারেই নতুন গার্মেন্ট খাতে। কয়েকটি কোম্পনি অবশ্য এ সম্পর্কিত তথ্য রাখা শুরু করেছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।