
কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমছে
কাপ্তাই হ্রদের পানি ক্রমাগত কমতে থাকায় রাঙ্গামাটির কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট ৫টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র একটির উৎপাদন চলমান রয়েছে। যার ফলে দৈনিক ২৪২ মেগাওয়াট সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। চলতি মাসজুড়েই (ফেব্রুয়ারি) এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে আরো বেশি উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও সারা বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হ্রদটির পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়েছে। প্রকৌশলীরা আশঙ্কা করছেন, আগামী মার্চ-এপ্রিলের দিকে হ্রদের পানি আরো কমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন নামতে পারে ২৫-৩০ মেগাওয়াটে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর কাপ্তাই হ্রদের পানি কর্ণফুলী নদীতে ছাড়া হয়। আবার কর্ণফুলীর পানি শোধনাগারে পরিশোধন করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কর্ণফুলীর পানি বছরজুড়ে প্রবাহিত না হলে সমুদ্রের পানির প্রভাবে নদীর লবণাক্ততা বাড়তে পারে। এতে ব্যাহত হতে পারে ওয়াসার পানি পরিশোধন। তাই চট্টগ্রাম নগরে পানি সরবরাহের সঙ্গে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনের সম্পর্ক থাকায় বছরজুড়েই সচল রাখতে হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন।
এদিকে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের পানি পরিমাপের রুল কার্ড (সময়সূচিভিত্তিক পানি ওঠানামার মাপ) অনুযায়ী গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হ্রদে পানি রয়েছে ৮৯ দশমিক ৫ মিন সি লেভেল (এমএসএল)। যদিও স্বাভাবিকভাবে পানি থাকার কথা ৯৩ দশমিক ৯০ এমএসএল। রুল কার্ডের হিসাবেই বর্তমানে হ্রদে সাড়ে ৪ এমএসএল পানি কম রয়েছে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম বা রাঙ্গামাটি জেলায় বড় ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় হ্রদের পানি বাড়ার সুযোগ নেই। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনাও নেই।
এর আগে ২০২৪ সালের আগস্টের শেষ দিকে ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে কাপ্তাই হ্রদে সর্বোচ্চ সীমা ১০৮ দশমিক ৬৯ এমএসএল পানি সংরক্ষিত হয়। সে সময়ে হ্রদের পানির ভারসাম্য ঠিক রাখতে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি স্লুইস গেট বা স্পিলওয়ে খুলে দেয়া হয়। আগস্টের দিকে পাঁচ ইঞ্চি করে স্লুইস গেট খোলা রাখা হলেও সেপ্টেম্বরে হ্রদের পানি বাড়ায় সর্বোচ্চ পাঁচ ফুট পর্যন্ত খুলে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তখন কেন্দ্রটির পাঁচ ইউনিট দিয়ে উৎপাদন হয় ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ মাত্র ৩০-৪০ পয়সা (সব ইউনিট সচল রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়া সাপেক্ষে)। তবে ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ানো-কমানো হয়।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদনসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ ব্যয় হয় তা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি। তাই এ কেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো গেলে সার্বিক ব্যয় কম হয় বিপিডিবির। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমছে। তাই এ কেন্দ্রের উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একাধিক ইউনিট সচল রাখার সুযোগ থাকলেও বছরজুড়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে একটি ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কর্ণফুলী নদীতেও পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা যাবে।