
‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত দেশের তৈরি পোশাক সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। দামে সস্তা এবং গুনগত মানে সেরা হওয়ার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করে থাকে। আর বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসে এ খাত থেকে। একক দেশ হিসেবে এ পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চলমান ২০২১ সালের প্রথম আট মাস জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে বাংলাদেশ থেকে ৪৩২ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থমূল্যের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪৩২ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি গত বছরের একই সময়ে আমদানি করে ৩৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক। এ হিসাবেই আমদানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পোশাকের অধিকাংশই কটনভিত্তিক। চলতি বছর আট মাসে মার্কিন বাজারে সবচেয়ে বেশি আমদানি হওয়া পণ্য হলো মেনস বা বয়েজ কটন ট্রাউজার। ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে এ পণ্যের আমদানি হয়েছে ৯৮ কোটি ডলারের। এছাড়া উইমেন বা গার্লস কটন স্ল্যাকস, মেনস বা বয়েজ নিট শার্ট, ওইমেনস বা গার্লস নিট ব্লাউজ—এ পোশাক পণ্যগুলোর আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ২৮, ৭৪ ও ৫৯ শতাংশ।
গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের ক্রয় পূর্বাভাস-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ‘২০২১ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বাণিজ্যের গতি এখনো দুর্বল। তবে সোর্সিং কস্ট বা পণ্য ক্রয় বাবদ ব্যয় বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনো আকর্ষণীয়। মূলত মূল্য সুবিধায় পণ্য কিনতেই বাংলাদেশমুখী হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক পণ্যের ক্রেতারা।
মার্কিন ফ্যাশন কোম্পানিগুলো আগামী দুই বছর বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পোশাক ক্রয়ে আগ্রহী উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ উল্লেখযোগ্য মূল্য সুবিধা দিতে পারে। তবে কভিড-পরবর্তী বিশ্বে পোশাক পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য ঘাটতি ভোগাতে পারে বাংলাদেশী সরবরাহকারীদের। জরিপে দেখা গেছে চলমান কভিডে ক্রেতাদের পণ্য চাহিদায় পরিবর্তন এসেছে। এখন মৌলিক পণ্যের চেয়ে সোয়েটার, স্মক ড্রেস, সোয়েটপ্যান্টের মতো পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। নতুন এসব চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি সফল ভিয়েতনাম। ফলে কভিড-পরবর্তী বিশ্বে মার্কিন ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর কাছে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং অবস্থান জটিল হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের পোশাক রফতানিকারক শিল্প-কারখানার মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় বৃদ্ধির বিষয়ে যে পূর্বাভাস মার্কিন ক্রেতারা দিয়েছেন, তা অস্বাভাবিক নয়; যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পোশাক আমদানির পরিসংখ্যানে। চলতি অর্থবছর শেষেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশ হতে পারে বলে প্রত্যাশা ছিল। মার্কিন পরিসংখ্যানে আট মাসে ২৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি তাই বেশ আশাব্যঞ্জক।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৫৯২ কোটি ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল। ২০২০ সালে কভিডের প্রভাবে আমদানি কমে যায়। গত বছর মার্কিন বাজারে পোশাকের আমদানি হয় ৫২২ কোটি ৮২ লাখ ৩২ হাজার ডলারের।