করোনা মহামারিতে সারাবিশ্বে চাহিদা বেড়েছে টেকনিক্যাল, টেক্সটাইল ও পিপিই পণ্যের। ২০২০ সালে এসব পণ্যের বৈশ্বিক আকার ছিল ১৭৯ বিলিয়ন ডলারের। ২০২৫ সাল নাগাদ এ বাজারের আকার হবে ২২৪ বিলিয়ন ডলারের। যা ধরতে এরইমধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের শিল্প মালিকরা।
‘স্কেলিং আপ দ্য প্রডাকশন অব টেকনিক্যাল টেক্সটাইলস (টিটি) ইনক্লুডিং পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ইন বাংলাদেশ বা বাংলাদেশে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদিসহ (পিপিই) টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাব্যতা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে এমন দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তৈরি পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহযোগিতায় জার্মান উন্নয়ন সংস্থা (জিআইজেড) পরিচালিত সমীক্ষায় বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সম্ভাবনার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে টিটি ও পিপিই পণ্যের উপখাত সৃষ্টির লক্ষ্যে গবেষণাটি করা হয়েছে। যদিও এরই মধ্যে বেক্সিমকো ও স্নোটেক্সের মতো প্রতিষ্ঠান টিটি ও পিপিইর সম্ভাবনা কাজে লাগানোর বিষয়ে সাফল্য দেখিয়েছে। সমীক্ষায় কাঁচামাল থেকে শুরু করে চূড়ান্ত পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত সব ধাপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পরীক্ষাগার, গবেষণা, উন্নয়ন সংস্থা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার ভূমিকার বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদাও যাচাই করা হয়েছে। দেখা গেছে টিটি ও পিপিই পণ্যের বৈশ্বিক বাজার প্রতি বছরই বাড়ছে। এ পণ্যের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির গড় ৪ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২০ সালে টিটির বাজারের আকার ছিল ১৭৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির গড় বিবেচনায় ২০২৫ সালে এ বাজারের আকার হবে ২২৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া পিপিই পণ্যের বাজার ২০২৫ সাল নাগাদ হবে ৯৩ বিলিয়ন ডলারের।
গবেষণা পরিচালনাকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা বলছেন, বাংলাদেশের টিটি ও পিপিই খাতে বিশাল সম্ভাবনা আছে। বিগত বছরগুলোজুড়ে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে টেক্সটাইল ও পোশাক খাতের অন্যতম বৈশ্বিক সরবরাহকারী হিসেবে তার অবস্থান সৃষ্টি করেছে। চলমান কভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও এখন এ অবস্থান ধরে রেখে আরো শক্তিশালী করা বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ বড় চ্যালেঞ্জ। টিটি ও পিপিই উৎপাদনের মাধ্যমে এখন টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্য সংযোজন বাড়ানো যেতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমপ্লায়েন্ট হওয়ার স্বীকৃতি এবং ইইউ ও মার্কিন বাজারের মতো বাণিজ্য অংশীদার আছে বাংলাদেশের। এ বিষয়গুলোকে পুঁজি করতে পারে বাংলাদেশ। টিটি ও পিপিই খাতে আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতা তৈরি করতে সমর্থ হলে উন্নত প্রযুক্তি চালু করাও বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে। এসব পণ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য বৈচিত্র্যও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি শিল্প মালিকদের মুনাফার সুযোগও প্রসারিত হবে। এমনকি সীমিতসংখ্যক পণ্যও যদি উচ্চমান বজায় রেখে উৎপাদন হয়, তাহলেও তাদের জন্য বাজারে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি ও পণ্যের দরজা খুলে যাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পোশাক প্রস্তুতকারক কারখানাগুলোর মধ্যে মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানই বেশি। টিটি বা পিপিই পণ্যের বড় পোশাক কারখানাগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে তেমন পরিচিত নয়। আবার মেডিকেল পিপিই পণ্যের সরবরাহ চেইন তৈরি পোশাকের তুলনায় অনেক বেশি জটিল। সমীক্ষায় টিটি ও পিপিই পণ্যে বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বাজারের চাহিদা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, অপর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত দক্ষতা, উচ্চমানসম্পন্ন পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহ করার অসুবিধা, কমপ্লায়েন্স ও সার্টিফিকেশনের চাহিদা এবং মূলধন বিনিয়োগের ওপর নির্ভরতা। এসব প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জিআইজেড টেক্সটাইল ক্লাস্টার নামের জার্মান উন্নয়ন সংস্থা স্থানীয় অংশীদারদের সামর্থ্য বাড়াতে সহযোগিতা দিচ্ছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমাদের প্রয়োজন বিনিয়োগ ও উন্নত বিশ্বের প্রযুক্তিগত জ্ঞান। আমাদের শিল্প টিটি ও পিপিইর সম্প্রসারণশীল বাজার ধরতে প্রস্তুত। টিটি ও পিপিই খাতে যৌথ বিনিয়োগ আমরা স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে ব্র্যান্ড, টেস্টিং সার্ভিসেস কোম্পানি এবং প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের সহায়তা নিয়ে একসঙ্গে হাত মিলিয়ে এ সম্ভাবনা আমরা বাস্তবে রূপ দিতে চাই।
ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়ে বলেন, এ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশকে টেক্সটাইল খাতে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
উল্লেখ্য, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে ৬১৮ মিলিয়ন ডলারের মাস্কসহ পিপিই রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি।