বিদায়ী বছরে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮০৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে এতো রেমিট্যান্স আর আসেনি। ২০১৯ সালের তুলনায় যা ছিলো ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৮৩২ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বিদায়ী ২০২০ বছরে (জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর) প্রবাসীরা ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এরমধ্যে বছরের প্রথম ছয় মাস (জানুয়ারি থেকে জুন) রেমিট্যান্স এসেছে ৮৯৯ কোটি ৩ লাখ ডলার। জুলাই থেকে ডিসেম্বর- এই ছয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৭৪ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।
এদিকে গত বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উর্ধ্বগতি ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে কমতে শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স আসে ১৪৫ কোটি ২০ কোটি ডলার, মার্চে ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং এপ্রিলে আসে ১০৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। এরপর মে মাস থেকে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করে। গত মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং জুন মাসে তা আরও বেড়ে ১৮৩ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়।
অন্যদিকে চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়, যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এরপর আগস্টে রেমিট্যান্স কিছুটা কমে হয়, ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে আবার বেড়ে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। অক্টোবরে ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স ২০৫ কোটি ৬ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
অন্যদিকে পঞ্জিকা বছর হিসাবে, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা টালমাটাল। ইতোমধ্যেই করোনার দ্বিতীয় টেউও শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রবাসীরা তাদের হাতে থাকা সঞ্চয় ধরে রাখা নিরাপদ মনে করছেন না। ফলে অনেকেই সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এতে গত মে মাস থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আশার কথা হলো, তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া শুরু করে সরকার। এরপর থেকেই প্রবাসী আয়ে গতি আসে। যদিও এই সময়েই কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রায় আড়াই লাখ প্রবাসী শ্রমিক। অনেকের বেতনও কমে গেছে। এরপরও রেমিট্যান্স বেড়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রমিকেরা ফিরে এলেও আয় বাড়ছে। কারণ বিদেশে চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় অবৈধভাবে টাকা পাঠানো কমে গেছে। এ জন্য বৈধ পথে রেমিট্যান্স বেশি আসছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।