ঢাকা     ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  ২ পৌষ ১৪৩১

Biz Tech 24 :: বিজ টেক ২৪

মানি লন্ডারিং এবং হাল্লাবোল

বিজটেক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ১৬ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৩:১০, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

মানি লন্ডারিং এবং হাল্লাবোল

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘‘অর্থ বা সম্পত্তি পাচার’’ অর্থ— (১) দেশে বিদ্যমান আইনের ব্যত্যয় ঘটাইয়া দেশের বাহিরে অর্থ বা সম্পত্তি প্রেরণ বা রক্ষণ; বা (২) দেশের বাহিরে যে অর্থ বা সম্পত্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রহিয়াছে যাহা বাংলাদেশে আনয়ন যোগ্য ছিল তাহা বাংলাদেশে আনয়ন হইতে বিরত থাকা; বা (৩) বিদেশ হইতে প্রকৃত পাওনা দেশে আনয়ন না করা বা বিদেশে প্রকৃত দেনার অতিরিক্ত পরিশোধ করা।

অর্থ পাচার রোধে মানি লন্ডারিং আইনের দন্ডবিধির সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। মানি লন্ডারিং অপরাধ ও দন্ড সম্পর্কে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে বলা হয়েছে- (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, মানিলন্ডারিং একটি অপরাধ বলিয়া গণ্য হইব। (২) কোন ব্যক্তি মানিলন্ডারিং অপরাধ করিলে বা মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা, সহায়তা বা ষড়যন্ত্র করিলে তিনি অন্যূন ৪ (চার) বৎসর এবং অনধিক ১২ (বার) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুন মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত, যাহা অধিক, অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন [ তবে শর্ত থাকে যে, আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত সময়সীমার মধ্যে অর্থদণ্ড পরিশোধে ব্যর্থ হইলে আদালত অপরিশোধিত অর্থদণ্ডের পরিমাণ বিবেচনায় অতিরিক্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।]

(৩) আদালত কোন অর্থদণ্ড বা দণ্ডের অতিরিক্ত হিসাবে দণ্ডিত ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে যাহা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানিলন্ডারিং বা কোন সম্পৃক্ত অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বা সংশ্লিষ্ট। (৪) কোন সত্তা এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটন করিলে বা অপরাধ সংঘঠনের চেষ্টা, সহায়তা বা ষড়যন্ত্র করিলে ধারা ২৭ এর বিধান সাপেক্ষে, উপ-ধারা (২) এর বিধান অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে এবং অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের অন্যূন দ্বিগুণ অথবা ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা, যাহা অধিক হয়, অর্থদন্ড প্রদান করা যাইবে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিলযোগ্য হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত সত্তা আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত সময়সীমার মধ্যে অর্থদন্ড পরিশোধে ব্যর্থ হইলে আদালত অপরিশোধিত অর্থদন্ডের পরিমাণ বিবেচনায় সত্তার মালিক, চেয়ারম্যান বা পরিচালক যে নামেই অভিহিত করা হউক না কেন, তাহার বিরুদ্ধে কারাদন্ডে দন্ডিত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।] (৫) সম্পৃক্ত অপরাধে অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হওয়া মানিলন্ডারিং এর কারণে অভিযুক্ত বা দণ্ড প্রদানের পূর্বশর্ত হইবে না।

নচিকেতার ‘হাল্লাবোল’ গানটি শুনছিলাম। গানের শুরতেই নচিকেতা বিশ্বস্ত সূত্র খবরে বলেন, ভারতের ২৮০ লক্ষ কোটি টাকা শুধু সুইস ব্যাংকে পড়ে আছে। এই টাকা যদি দেশে থাকতো, তবে দেশের এবং দেশের মানুষের যে সুবিধা হতো, তারও একটা বিবরণ গানের মধ্যে দেয়া হয়েছে।

এক. এই টাকা দেশে থাকলে ৩০ বছর কাউকে কোন ট্যাক্স দিতে হতো না।
দুই. ৬০ কোটি মানুষের চাকরি হতে পারতো।
তিন. ৫০০টি সামাজিক প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ হতে পারতো।
চার. আগামী ৬০ বছর প্রতি নাগরিক দুই হাজার করে টাকা মাসিক ভাতা পেতে পারতো।
পাঁচ. দেশের যে কোন প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রাজধানী দিল্লী পর্যন্ত চার লেনের হাইওয়ে রাস্তা হতে পারতো।
ছয়. বিদেশি ঋণের কোন প্রয়োজন হতো না।

বাংলাদেশ আমাদের প্রাণের দেশ। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের অর্থ যেন দেশেই থাকে এবং সেটি যেন সঠিকভাবে বিনিয়োগ হয়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য সকল পর্যায়ের মানি লন্ডারিং অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

লেখকঃ রিয়াজুল হক, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুগ্ম-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।