নিজের সঙ্গে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রযুক্তি পণ্য আইফোন ১৫ সম্প্রতি উন্মোচন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোর অ্যাপেল পার্কে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় নতুন সংস্করণটির।
পূর্বের স্টেইনলেস স্টিলের জায়গা টাইটেনিয়াম ফ্রেম ব্যবহার করা নতুন এই সংস্করণটি বাজারে ছাড়া হবে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর। কী কী থাকছে এই নতুন আইফোনে, ইতোমধ্যে বাজার কাঁপানো আইফোন ১৪-কে তা কতটুকুই বা ছাপিয়ে যেতে পারবে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রসেসর
ডায়নামিক আইল্যান্ডকে তৎপর করার জন্য আইফোন ১৫-তে রয়েছে এ-১৬ বায়োনিক চিপ। সিপিইউকে সচল রাখার জন্য রয়েছে ৩.৪৬ গিগা হার্টজের দু’টি এবং ২.০২ গিগা হার্টজের চারটি; মোট ৬-কোর। মেমরি ব্যান্ডউইথের ৫০%-এরও বেশিজুড়ে রয়েছে ৫-কোর জিপিইউ (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট)। ১৬-কোর নিউরাল ইঞ্জিন সফটওয়্যারগুলোকে সমুন্নত রাখে আইওএস (আইফোন অপারেটিং সিস্টেম) ১৭-এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে।
ডিসপ্লে
আইফোন ১৫-তে ৬.১ ইঞ্চি সুপার রেটিনা এক্সডিআর (এক্সটেন্ডেড ডিটেকশন রেসপন্স) ও এলইডি (অর্গানিক লেড) ডিসপ্লের উপরের দিকে রয়েছে ডায়নামিক আইল্যান্ড। মডেলের লেআউট ডিজাইনে দৈর্ঘ্য ১৪৭.৬ মিলিমিটার (মিলিমিটার), প্রস্থ ৭১.৬ মিলিমিটার এবং উচ্চতা ৭.৮ মিলিমিটার। আর পুরো ডিভাইসটার ওজন ১৭১ গ্রাম। ডিসপ্লে রেজোলিউশন ২,৫৫৬ বাই ১,১৭৯ পিক্সেল। যেখানে পিক্সেল ঘনত্ব প্রতি ইঞ্চিতে ৪৬০ পিক্সেল। এইচডিআর (হাই ডাইনামিক রেঞ্জ) উজ্জ্বলতার সর্বোচ্চ মাত্রা ১,৬০০ নিট, যা আউটডোরে ২,০০০ নিট পর্যন্ত পৌঁছায়।
ক্যামেরা
৪৮ মেগাপিক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন প্রধান ক্যামেরায় থাকছে ২৬ মিলিমিটার লেন্স, কোয়াড-পিক্সেল সেন্সর এবং ১০০% ফোকাস পিক্সেল। সেকেন্ডারি ক্যামেরায় থাকছে ১২ মেগাপিক্সেলের আলট্রা ওয়াইড সেন্সর এবং ১৩ মিলিমিটার লেন্স।
এ১৬-এর কম্পিউটেশনাল ফটোগ্রাফির শক্তি ব্যবহার করে এমনিতেই ক্যামেরা ২৪ মেগাপিক্সেল সুপার-হাই-রেজোলিউশনে উঠতে পারে। ডুয়াল-ক্যামেরা সিস্টেমে ০.৫এক্স, ১এক্স ও ২এক্স; মোট তিনটি স্তরে রয়েছে অপটিক্যাল-কোয়ালিটির জুম করার সুবিধা।
আর সামনের দিকে আছে ১২ মেগাপিক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেলফি সেন্সর, যাতে রয়েছে ২৩ মিলিমিটার লেন্স।
মেমোরি ও সিম কার্ড
১২৮ জিবি (গিগাবাইট), ২৫৬ জিবি, এবং ৫১২ জিবির প্রতিটি ভ্যারিয়েন্টের স্টোরেজের সঙ্গে থাকছে ছয় জিবি র্যাম। ন্যানো সিমের সঙ্গে আইফোন ১৫-এর রয়েছে ২৯৫টিরও বেশি ক্যারিয়ার সমর্থিত ই-সিম সুবিধা।
নিরাপত্তা ক্ষমতা
আইফোন ১৫ স্যাটেলাইট অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে গাড়ি বিকল হয়ে যাওয়া, ক্র্যাশ ডিটেকশন, জরুরি এসওএস-এ সহায়তার ব্যবস্থা করতে পারে। এটি মূলত ট্রিপল এ (অথেন্টিকেশন অথোরাইজেশন অ্যাকাউন্টিং) এর মাধ্যমে করা হয়।
যে অঞ্চলগুলো সেলুলার ডাটা কিংবা ওয়াইফাই কভারেজের বাইরে থাকে, সেগুলোর জন্য আইফোন ১৫ নিকটবর্তী এলাকায় থাকা ট্রিপল-এ-এর সঙ্গে সংযোগ করে। এখানে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলীসহ একটি ইন্টারফেসের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থীর নিকট থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে সরাসরি ট্রিপল-এ ব্যবহারকারীর কাছে পাঠানো হয়।
এতে করে সঠিক অবস্থানে জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে সহায়তা পৌছাতে পারে। এই সেবাটি দুই বছরের জন্য বিনামূল্যে আইফোন ১৫ ব্যবহারকারিদের দেওয়া হবে। পরবর্তীতে ট্রিপল-এ মেম্বারশীপ নেওয়া আইফোন ব্যবহারকারিদের এই সেবার আওতায় আনা হবে।
চার্জিং ও ডাটা কানেকশন হার্ডওয়্যার
চার্জিং ও ডাটা স্থানান্তরের হার্ডওয়্যার হিসেবে রয়েছে ইউএসবি‑সি, যা যেকোনো আইফোন ডিভাইসের সঙ্গে সংযোগের জন্য উপযুক্ত। এছাড়াও রয়েছে ম্যাগসেফ এবং কিউআই-২ চার্জার সমর্থিত ওয়্যারলেস চার্জিং-এর সুবিধা। ব্যাটারি মাত্র ৩০ মিনিটে ৫০% চার্জ নিতে পারে। এমনকি, ম্যাগসেফের জন্য ১৫ ওয়াট এবং কিউআই-এর জন্য ৭.৫ ওয়াটে চার্জিং-এর সময়েও গতি একই থাকে।
এই আইফোনের দ্বিতীয়-প্রজন্মের আলট্রা ওয়াইডব্যান্ড চিপ তিনগুণ রেঞ্জের ভেতর দুটি আইফোন ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ করতে সক্ষম।
রঙ ও গঠন
কালো, নীল, সবুজ, হলুদ, ও গোলাপি- এই পাঁচটি ভিন্ন রঙ দেওয়া হয়েছে পেছনের গ্লাসে। পেছনের পাতলা কর্নিং গ্লাসে টেক্সচার্ড ম্যাটের কাজ করা। ফ্রেম অ্যারোস্পেস-গ্রেড অ্যালুমিনিয়ামের এবং মসৃণভাবে বাঁকানো প্রান্ত। পুরো মজবুত কভারটি সিরামিক শিল্ডের।
দাম
আইফোন ১৫ এর দাম ধরা হয়েছে ৭৯৯ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৮৭,৫৪৬.৭৫ টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১০৯.৫৭ বাংলাদেশি টাকা)। যেখানে আইফোন ১৪-এর দাম ছিল ৬৯৯ মার্কিন ডলার। আর আইফোন ১৫ প্রো-এর দাম ৯৯৯ এবং আইফোন ১৫ ম্যাক্স এর দাম ১১৯৯ মার্কিন ডলার।