বাবার কেনা মাত্র ৪২০টি শেয়ার থেকে কোটিপতি বনে গেছেন মেয়ে। কেনার পরপরই অবশ্য এই শেয়ারগুলোর কথা ভুলে গিয়েছিলো পরিবারটি। তবে তারা ভুলে গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চক্রবৃদ্ধির জাদুতে এই শেয়ারগুলোতে ঠিকই কাজ করছিল। ঘটনাটি ভারতের রাঁচির হাতিয়ার বাসিন্দা ঊষাকে শর্মাকে (ছদ্মনাম)।
১৯৭০-এর দশকে বর্তমান ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আইটিসি লিমিটেডের ৪২০টি শেয়ার কিনেছিলেন ঊষা শর্মার বাবা। বছরের পর বছর ধরে বোনাস এবং শেয়ার বিভাজনের ফলে ২০১৭ সালে ওই ৪২০টি শেয়ার পরিণত হয় ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮০টি শেয়ারে। আর তখন এই শেয়ারগুলোর মূল্য দাঁড়ায় সাড়ে ৬ কোটি রুপিরও বেশি।
বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যুর পর এই শেয়ারের একমাত্র মালিক হন ঊষা শর্মা। তবে এই বিপুল সম্পত্তির দাবি আদায় করা সহজ হয়নি ঊষার জন্য। এর জন্য রাঁচির হাতিয়ার বাসিন্দা ঊষাকে পেরোতে হয়েছে জটিল আইনি বাধা।
শেয়ারগুলোর দাম অনেক বেশি হওয়ায় সেগুলো ঊষা শর্মার নামে স্থানান্তর করার জন্য কোনো উপযুক্ত আদালত থেকে উত্তরাধিকারের সনদ (সাকসেশন সার্টিফিকেট) জোগাড় করার প্রয়োজন ছিল। এ প্রক্রিয়া শুরু হয় হরিদ্বারের আদালতে। ঊষার মতো একজন বয়স্ক নারীর জন্য রাঁচি থেকে এত দূরে যাতায়াত করে আদালতে হাজিরা দেয়া ছিল অত্যন্ত কষ্টকর কাজ।
তবে আইনি জটিলতা পেরিয়ে উত্তরাধিকারের সনদ সংগ্রহ করেন তিনি। উত্তরাধিকারের সনদ জোগাড়ের পর শুধু বাকি ছিল আইটিসি থেকে শেয়ারগুলো বুঝে পাওয়া। এটাও আরেকটা বড় বাধা হয়ে এসেছিল ঊষার জন্য। এর জন্য প্রচুর কাগজপত্রের প্রয়োজন ছিল।
শেয়ার স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ ও নথি জোগাড় পরও বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয় ঊষাকে।
এই পর্যায়ে এসে বাইরের কারও সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ঊষার ছেলে সঞ্জয় (ছদ্মনাম)। শেয়ার সমাধান নামে একটি বিনিয়োগকারী শিক্ষা ও সুরক্ষা তহবিল (আইইপিএফ) প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। ঊষার যে ধরনের কাগজপত্র প্রয়োজন, ওইসব কাজ সামলানোতে বিশেষভাবে দক্ষ কোম্পানিটি।
শেয়ার সমাধান প্রথমেই উত্তরাধিকার সনদে ঊষার বাবার নাম যোগ, সনদটি হিন্দি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের মতো কাজগুলো হালনাগাদ করে নেয়। তারপর আইটিসিকে শেয়ার স্থানান্তরের জন্য চিঠি দেয়। কিন্তু তারপরও আইটিসি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।
এরপর আরও কয়েক মাস কাজ করতে হয় শেয়ার সমাধানকে। কোম্পানিটি ঊষা শর্মার পক্ষ থেকে আইটিসিতে ফোন করে, চিঠি ও ইমেইল পাঠায়। এমনকি আইটিসির অফিসেও যায় তাদের টিম।
অবশেষে, পাঁচ মাস পর এল সাফল্য। সবশেষ মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮০টি ইকুইটি শেয়ার ঊষার নামে স্থানান্তর করে। বাবার রেখে যাওয়া ৪২০টি শেয়ারের বদৌলতে ঊষা এখন কোটিপতি।