দক্ষিণ কোরীয়ায় পোস্ট অফিসে কাজ ও প্রাইভেট পড়িয়ে কলেজে পড়াশোনার খরচ জোগাতেন গিম সিওং-গন। কৃষকের ছেলে গিম ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে যখন ইস্পাতের কাঠামো তৈরির ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন তখন তিনি বায়ুবিদ্যুৎ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এ সিদ্ধান্ত ৬৭ বছর বয়সী গিমকে বিলিয়নেয়ার ব্যবসায়ীতে পরিণত করেছে। গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপ থেকে প্রাথমিক মূলধন সংগ্রহের মাধ্যমে যাত্রা শুরুর পর গিমের প্রতিষ্ঠান পিএস উইন্ড করপোরেশন এখন বিশ্বের বৃহত্তম উইন্ড টার্বাইন প্রস্তুতকারক হয়ে উঠেছে।
চার বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ব্যাপক আকারে বেড়েছে। গত বছরই পিএস উইন্ডের শেয়ার পাঁচ গুণ বেড়েছে। কৃষকের ছেলে গিম এখন দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স সূচক অনুযায়ী, সংস্থায় পরিবারের সঙ্গে তার মালিকানায় থাকা ৫১ শতাংশের মূল্য ১৪০ কোটি ডলার।
সিউলভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা ইউজিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ কোয়ের বিশ্লেষক হ্যান বাইং-হাওয়া বলেন, গিম বিশ্বজুড়ে এ খাতে বৃদ্ধির সম্ভাবনার বিষয়টি দ্রুত ধরতে পেরেছিলেন। অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী ব্যবসার তুলনায় এ শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কম শ্রম ব্যয়ের সুবিধা কাজে লাগাতে গিম ২০০৩ সালে ভিয়েতনামে সিএস উইন্ডের প্রথম উইন্ড-টাওয়ার কারখানা স্থাপন করেছিলেন। এর মাধ্যমেই তার নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে পথচলা শুরু হয়। পাঁচ বছর পর বিখ্যাত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের থেকে ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিনিয়োগ পায় সিএস উইন্ড। এ বিনিয়োগই গিমের ব্যবসা সাতটি দেশে প্রসারিত করতে সহায়তা করেছিল। সিএস উইন্ড এখন মালয়েশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে কারখানা পরিচালনা করছে। সংস্থাটি সিমেন্স গেমস্যা রিনিউয়েবল এনার্জি এসএ, জেনারেল ইলেকট্রিক কো ও ভেস্টাস উইন্ড সিস্টেম এ/এসের মতো সংস্থাগুলোর কাছে উইন্ড টার্বাইন বিক্রি করছে।
প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রেও কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করছে, যেখানে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
২০১৪ সালে একটি ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাত্কারে গিম বলেছিলেন, একটি ব্যবসা চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন লক্ষ্য সন্ধান করতে হয়। যখন একটি লক্ষ্য অর্জিত হয়, তখন আপনাকে একটি নতুন লক্ষ্য সন্ধান করতে হবে। আমি এভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছি।
গিমের এ সাফল্যের পেছনে কার্বন নির্গমন কমাতে বৈশ্বিক উদ্যোগগুলো ভূমিকা পালন করছে। ব্লুমবার্গ নিউ এনার্জি ফিন্যান্স লিমিটেডের একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো সবুজ, বায়ু ও সৌর তথা নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে ২০৫০ সালে বৈশ্বিক বিদ্যুতের চাহিদার ৫৬ শতাংশ পূরণ করবে। জো বাইডেন ২০৩৫ সালের মধ্যে মার্কিন বিদ্যুৎ গ্রিডকে কার্বনমুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এছাড়া চীন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৫৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য শক্তিতে এ গুরুত্বারোপ সিএস উইন্ডের মুনাফা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। সংস্থাটির আয় ২০১৯ পর্যন্ত দুই বছরে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত বছরের প্রথম নয় মাসে সিএস উইন্ডের মুনাফা ১৬ শতাংশ বেড়ে ৬৩ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। পাশাপাশি নিট আয় ৬৮ শতাংশ বেড়ে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার স্পর্শ করেছে।