ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রতারণার আরেকটি মাধ্যম এর দালাল চক্র অনলাইনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির দালাল চক্রের সদস্যরা অন্যদের ইভ্যালি থেকে পণ্য কিনতে বিভিন্ন ধরণের প্রলোভন দিয়ে থাকে। এছাড়া যদি কোনো ভুক্তভোগী ইভ্যালির প্রতারণা নিয়ে ফেসবুকে অভিযোগ করে স্ট্যাটাস দেয় তাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেয়াসহ হয়রানি করে এসব দালাল চক্রের সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব দালাল চক্রের সদস্যরা ইভ্যালির কিছু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসে কম মূল্যে মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, মোবাইলফোনসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করে। আর সাধারণ ক্রেতারা দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও পণ্য হাতে পায়না।
মো. আব্দুল বারেক নামে একজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, ইভ্যালিতে পণ্য অর্ডার দিয়ে প্রায় ৭ মাসেরও অধিক সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এটাই কি ই-কমার্স? ইভ্যালি নাকি অ্যামাজন হবে! আমি বলি ইভ্যালি ধ্বংস হয়ে যাবে। এভাবে ইভ্যালি ধীরে ধীরে গ্রাহকশূন্য হবে। এখনি সময় এসেছে ইভ্যালিকে বর্জন করার।
জিএম মাহাবুব নামে এক ভুক্তভোগি জানান, ১৩ জানুয়ারিতে গ্রোসারির সাইক্লোন অফারে দুধ অর্ডার করছিলাম। ইভ্যালির ডেলিভারি কন্ডিশন অনুযায়ী ৭-২১ কার্যদিবসের মধ্য ডেলিভারি দেয়ার কথা। কিন্তু প্রায় ৪৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন তাদের Help & Review পেজে কমেন্ট করায় আমাকে প্রায় ১৫ দিন ব্লক করে রাখছে।
ওমর ফারুক নামে এক গ্রাহক বলেন, ইভ্যালির বিরুদ্ধে চরম কঠিন পদক্ষেপ নেয়া উচিত সরকারের। ৪৫ দিনে কথা বলে গ্রাহকের টাকা ৮ মাস আটকে রাখছে, এটা কি মগের মুল্লুক? কেউ কোনো প্রতিবাদ না করাতে তারা পেয়ে বসেছে। আর ফেসবুকে কিছু লিখলেই ইভ্যালির দালাল বাহিনী আজেবাজে কমেন্টস করে। আমার মনে হয় ইভ্যালি টাকা দিয়ে এসব দালাল বাহিনী পোষে।
এদিকে ই-ভ্যালির আর্থিক অব্যবস্থাপনার ত্রুটি তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নতুন করে তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীনকে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া অপর এক চিঠিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে ই-ভ্যালির কার্যক্রম তদারক করতে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলকে আইন মেনে ই-ভ্যালি যাতে ব্যবসা করে, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ইভ্যালির ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়কে (আরজেএসসি) পৃথকভাবে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে গত ১২ জানুয়ারি শুধু জননিরাপত্তা বিভাগ প্রতিবেদন তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, দণ্ডবিধি ১৮৬০ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আইন ২০০৯ অনুযায়ী অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পর সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করা অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা। এর শাস্তি এক থেকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।
এছাড়া ক্যাশব্যাক অফারে গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে নিজের ওয়ালেটে রাখছে ইভ্যালি। আবার পণ্য কেনার সময় গ্রাহকদের ১০০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। এ ধরনের অপরাধের দায়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিকের সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।