আমরা অনেক সময় পুরাতন মোবাইল ফোন কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা আগ্রহী হয়ে উঠি। তার একটি কারণ এর দাম কম। কিন্তু এই উঠে পড়ে লাগতে গিয়েই কিছু বিষয় আমরা ভুলে যাই। যার ফলে দেখা যায় যে, ফোন কেনার কিছুদিন পরেই ভুগতে হয় নানা সমস্যায়, পড়তে হয় নানা বিপত্তিতে।
হ্যা এটা মানতেই হবে যে, সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনা অনেক সময়ই আর্থিক দিক থেকে কিছুটা লাভবান করে। সেই সাথে এই বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে যে, ফোনটার ফিচারে ঠিকঠাক আছে কি না।
বিক্রয় ডট কম এর মত কিছু বিশ্বস্ত ক্লাসিফাইড প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে আপনি পুরাতন মোবাইল ফোন এর পাশাপাশি ব্র্যান্ড নিউ মোবাইল কিনতে পারবেন। কিন্তু কেনার আগে অবশ্যই আপনাকে সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা সচরাচর যে ভুলগুলো করি তা একবার দেখলেই আপনি বুঝে যাবেন কি কি এড়ানো উচিত? আর আপনাকে সচেতন করতেই আমাদের আজকের আর্টিকেল পুরাতন মোবাইল কিনতে যে ৭টি ভুল আমরা করি। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
পুরাতন মোবাইল ফোন কেনার আগে যে ৭টি ভুল অবশ্যই করবেন না
পুরানো ফোন কিনতে যেয়ে অনেক ভুলই আমরা করে থাকি। যেমন, তাড়াহুড়ো করে চুরি করা ফোন কেনা এবং এমনি আরও অনেক। কিন্তু সাধারণত যেসব সমস্যা বারবার মানুষ রিপিট করছে সেগুলোই থাকবে এই পুরনো মোবাইল কিনতে যে ৭ টি ভুল আমরা করি আর্টিকেলে।
ফোন অফিসিয়াল কি না তা চেক না করা
আমরা তাড়াহুড়ো তে একদম ভুলেই যাই এই বিষয়টা। যার ফলে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। আন-অফিসিয়াল ফোনের বিষয়টা তাই আপনাকে দেখে নিতে হবে। কিভাবে চেক করবেন তা নিয়ে আর আগাচ্ছি না। কেননা তা কম বেশি আপনি জানেনই। কিন্তু এর পাশাপাশি যে বিষয়টা আমি আপনাকে বলব,তা হলো চোরাই ফোন কি না তা চেক করে নেয়া। বলতে পারেন এটা কেন। আসলে যে ফোন চুরি করেছে সে যার কাছ থেকে চুরি করেছে তিনি কিন্তু ফোনটা খুজছেন। যার ফলে যদি ফোনটা কেনার পর সেই লোক আপনার খোজ পেয়ে যায় তাতে অনেক সমস্যাই হবে। তাই শুরুতেই আপনাকে ইনশিউর করে নিতে হবে যে ফোনটা চোরাই কি না। এর জন্য আপনি যা করতে পারেন তা হলো ফোনটার রিসিট চেক করে নেয়া। অর্থাৎ বায়িং রিসিট,যেখানে ফোন কেনার দিন তারিখ লেখা থাকবে। সেই রিসিট থেকে আপনি সেই দোকানের মালিককেও ফোন করতে পারেন। সেখান থেকে নিশ্চিত হতে পারবেন ফোনটা আদৌ বিক্রি হয়েছিল কি না। হ্যাঁ, তিনি বলতে পারেন মনে নাই। তবে খানিকটা তথ্য সেখান থেকে পেয়ে যাবেন যদি রিসিট থাকে। অন্যথায় রিসিট ব্যতীত কিনবেন না।
ফোনের ফিজিক্যাল ড্যামেজ চেক না করা
তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে আমরা আরেকটি জিনিস দেখারই সময় পাই না। এটা হলো ফোনের কোনো ফিজিক্যাল ড্যামেজ আছে কি না। যার ফলে বাসায় আসার পর পর হয় ভোগান্তিতে। আর তা এড়ানোর জন্য আপনাকে ফোন চোরাই কি না তা চেক করার পরই ফোনের ফিজিক্যাল ড্যামেজ চেক করে নিতে হবে। ফিজিক্যাল ড্যামেজ বলতে ধরুন, ডিসপ্লে ভাঙ্গা কি না। বা কোনো পোর্ট নষ্ট কি না। হ্যা, এটা স্বাভাবিক যে সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন আপনি নতুনের মতো কখনোই পাবেন না। তাতে অবশ্যই কিছু দাগ থাকবেই। কিন্তু সেই দাগটা কতটুকু। দাগটা কি অস্বাভাবিক কি না। এসব চেক করে নিতে হবে অবশ্যই। না হলে সমস্যায় পড়বেন। সেই সাথে এইটাও দেখে নিতে হবে যে, আপনার ফোনটা কখনো খোলা হয়েছিল কি না। আপনি ফোনের স্ক্রু গুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন যে আগে কখনো ফোনটা খোলা হয়েছিল কি না। আর এভাবে প্রতিটা জিনিস নিয়ে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে।
ডিসপ্লে প্রব্লেম চেক না করা
ডিসপ্লে আপনার ফোনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পার্ট। যা না হলে ফোন চালাতেই পারবেন না। এখন এই ডিসপ্লেতেই যদি প্রব্লেম থাকে তাহলে কিভাবে ফোন কিনে স্বাচ্ছন্দ্যে তা ব্যবহার করবেন? আর তাই ডিসপ্লের বিষয়টা পরীক্ষা করে নিতে হবে। যা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার সময় আমরা ভুলেই যায়। এক্ষেত্রে আপনার যা চেক করে নিতে হবে তা হলো টাচ কোয়ালিটি ঠিক আছে কি না৷ অথবা মাল্টি টাচ ফিচার থাকলে সেটা ঠিকঠাক কাজ করছে কি না। এক্ষেত্রে ফোনটা যদি non-OEM ডিসপ্লে দ্বারা রিপ্লেস করা হয় তাহলে কিভাবে বুঝবেন এই প্রশ্ন আপনার মনে হয়তো এসেছে। সেক্ষেত্রে বেশি কিছু না। বরং আপনি ফোনের ব্রাইটনেস চেক করুন। যা স্বাভাবিক আছে কি না খুব সহজেই বুঝবেন। এরপরে যে জিনিসটা তা হলো স্ক্রিন কোয়ালিটি যা আপনাকে বলে দিবে এখানে non-OEM ব্যবহার হয়েছে কি না। সর্বশেষ সাইডে দেখুন কোনো গ্লু ব্যবহার করা হয়েছে কি না। এসব বিষয় খতিয়ে দেখুন। পাশাপাশি ডিসপ্লে চেকার এপ দিয়েও পরীক্ষা করে নিতে পারেন এসব।
ব্যাটারী ঠিকভাবে চেক করে নেয়া
এরপরেই যে বিষয়টা সামনে আসে তা হলো ব্যাটারী। ফোনের ব্যাটারী ব্যাক আপ যদি ভালো না হয় তাহলে ইউজার এক্সপেরিয়েন্সও ভালো হবে না নিঃসন্দেহে। এটা ঠিক যে নতুন ফোনের মতো কিছুই যেখানে পাবেন না সেখানে ব্যাটারীর আশা করাও বৃথা। তবে ব্যাটারীর কিছুদিক চেক করে নেয়া অতীব জরুরি। ফোন যদি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারী নিয়ে গঠিত হয় তবে একটু বেশিই সতর্ক থাকতে হবে। এটি একারণেই যে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারীগুলো সময়ের সাথে সাথেই নিজেদের ক্যাপাসিটি হারাতে শুরু করে। এক্ষেত্রে নতুন ফোন কিনলে তো তেমন সমস্যা নেই। তবে আপনি যদি একেবারেই অনেক পুরানো ফোন কিনতে যান তবে নিশ্চয় এটা ভাবার বিষয়। কেননা এমনিতেই এর ব্যাটারী অনেকদিন পুরানো। যার ফলে ঠিক ফলাফল দিতে সক্ষম হবে না। এরপরেই যে বিষয়টা চেক করবেন তা হলো চার্জিং লেভেল। ফোনটা কতক্ষণ পর পর চার্জ হারাচ্ছে তা একটু দেখে নিবেন। হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চালালেই তা বুঝতে পারবেন।
যদি এখানে দেখেন খুব তাড়াতাড়িই চার্জ হারাচ্ছে তাহলে নিশ্চয় এতে কিছু একটা সমস্যা তো রয়েছেই। যার কারণে আপনার উচিত হবে কম দামের পাল্লায় না পড়ে ফোনটা এড়িয়ে যাওয়া।
সাউন্ড এবং চার্জিং ক্যাপাব্লিটি চেক না করা
এ পর্যায়ে আপনাকে একটু নজর দিতে হবে ফোনের সাউন্ড কোয়ালিটির দিকে। সেটি কেমন? ফোনটির মাইক্রফোন এর কোয়ালিটি এক্ষেত্রে চেক করুন। যথাযথ সাউন্ড দিচ্ছে কি না। বা আদৌ সাউন্ড হয় কি না সে বিষয়গুলো একটু দেখুন। সেই সাথে স্পিকারগুলোও ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন। যার ফলে আপনি এইদিকগুলো নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। সেই সাথে আপনার চার্জার দিয়ে চেক করুন যে চার্জ হয় কি না। চার্জ যদি হয়ে থাকে তবে তো ভালো। তবে সমস্যা থাকলে তা আপনাকে এড়িয়ে যেতেই হবে। এখানে কিছু অ্যাপ এর নাম আপনাকে জানাব যা আপনার এই কাজগুলোতে সহায়তা করবে। তাদের মধ্যে একটি হলো ফোন ডক্টর প্লাস। সেই সাথে আরও আছে ফোন চেক এন্ড টেস্ট, টেস্টএম হার্ডওয়ার এবং টেস্ট এন্ড্রয়েডের মত এপগুলো। আপনার কি কি চেক করা উচিত তার একটা পরিপূর্ণ চেকলিস্ট এই এপগুলোতে আপনি পাবেন।
ক্যামেরা কোয়ালিটি চেক না করা
একটা ভালো ক্যামেরার চাহিদা তো আমাদের থাকেই তাই না? এখন ফোন কিনতে যেয়ে যদি তা না পাই তখন কেমন লাগবে? নিশ্চয় খারাপ তাই না? আর তাই ফোন কেনার আগেই দেখে নিতে হবে ক্যামেরা পারফর্মেন্স ঠিকঠাক আছে কি না। ক্যামেরা কোয়ালিটি চেক করার জন্য আপনি তা দিয়ে ছবি তুলে দেখে নিতে পারেন। ফলে ছবির কোয়ালিটি দেখে আন্দাজ করতে পারবেন ইনসাইড প্রব্লেম সমন্ধে। সেই সাথে বিক্রেতার জানানো ক্যামেরা রেসুল্যুশন অনুসারে ছবির কোয়ালিটি কেমন তাও পরোপ করে নিতে পারবেন। এছাড়াও ক্যামেরাতে কোনো স্ক্রাচ আছে কি না, সে বিষয়টিও দেখে নিতে হবে। কেননা ক্যামেরাতে স্ক্রাচ থাকলে তা কখনোই ছবি তুলতে পারবে না। আর তাই এই জিনিসটির উপর জোর দিন। সেই সাথে ফ্রন্ট এবং ব্যাক দুটো ক্যামেরা দিয়েই ছবি তুলে দেখুন। যা একটু উপরেই আপনাকে জানিয়েছি।
পোর্ট এবং সিমস্লট চেক না করা
এবার আপনার দেখতে হবে পোর্টগুলো ঠিকঠাক আছে কি না। এর মধ্যে চার্জিং পোর্টের বিষয়টি উপরের এক পয়েন্টে আমরা তুলে ধরেছি। এবার যে বিষয়গুলো তা হলো সিমস্লট নিয়ে। আপনি ফোনের সিমস্লট গুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিবেন। আর তা করার জন্য আপনাকে ফোনের সিমস্লট খুলতে হবে। সেখানে আপনার কোনো এক সিম ঢুকিয়ে নিন। ঢুকানোর পর দেখে নিন মোবাইলে নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক দেখাচ্ছে কি না। এরপর যা করতে হবে তা হলো কল করা। দেখুন আপনার সিম দিয়ে আদৌ কল হচ্ছে কি না। তবে খেয়াল রাখবেন আপনার সিমকার্ডটি ঠিক রয়েছে কি না। কেননা সিমস্লট ঠিক থাকলেও সিমকার্ডে সমস্যার জন্য কল নাও হতে পারে। একইভাবে মেমোরি কার্ডটিও ঢুকিয়ে দেখে নিন। আপনার স্টোরেজ ঠিকঠাক রয়েছে কি না একটু পরোপ করে দেখুন। যদি ঠিক থাকে তবে মেমোরি স্টোরেজ ফোনে ভেসে উঠবে।
শেষ কথা
একটি পুরানো ফোন কেনার আগে এ বিষয়গুলোর প্রতি আপনার জোর নজর দিতে হবে। কেননা এগুলোর একটাতেও যদি সমস্যা থেকে থাকে তবে ভোগান্তিতে পড়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তাই সচেতনতার সাথে চেক করে নিন। আপনার ফোনটির ডিসপ্লে থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু। আশা করি ভালো ফলাফলই পাবেন।