সামরিক অভূত্থানের পর মিয়ানমারজুড়ে বিশৃঙ্খলা এবং জান্তা সরকার মোবাইল ও ইন্টারনেটের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করার পর দেশটি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরওয়ের টেলিকম অপারেটর টেলিনর। লেবাননের বিনিয়োগ সংস্থা এম১ গ্রুপের কাছে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে মিয়ানমারের পুরো কার্যক্রম বিক্রিতে সম্মত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার টেলিনর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এবং পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈরুত-ভিত্তিক এম১ গ্রুপ দেশটিতে থাকা টেলিনরের পুরো ব্যবসা অধিগ্রহণ করবে। এর মধ্যে স্পেকট্রাম, লাইসেন্স, চুক্তি ও পরিচালনা, কর্মচারী ও গ্রাহক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে এ চুক্তি করা হচ্ছে। টেলিনর জানিয়েছে, দেশটিতে থাকা তাদের পুরো ব্যবসাটির অন্তর্নিহিত মূল্য প্রায় ৬০ কোটি ডলার।
এর আগে টেলিনর জানিয়েছিল, বর্তমান সামরিক নেতৃত্বের অধীনে মিয়ানমারের অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করে তারা জনগণের ওপর ইতিবাচক অবদান রাখতে পারবে কিনা- তার ওপর দেশের উপস্থিতি নির্ভর করবে।
দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে উভয় দিক থেকে চাপের কারণে মিয়ানমারে বিনিয়োগ করা অনেক বিদেশী সংস্থা তাদের নিজস্ব স্বার্থ এবং তাদের কর্মীদের নিয়ে এক ভারসাম্যহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছে। কিছু সংস্থা তাদের প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত কিংবা লভ্যাংশের অর্থ প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে।
টেলিনর গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সিইও সিগভি ব্রেককে বলেন, নিরাপত্তা, নিয়ন্ত্রক ও নীতিজনিত কারণে মিয়ারমারের পরিস্থিতি ক্রমশ চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে উঠছিল। আমরা সকল বিকল্পের মূল্যায়ন করেছি। আমরা বিশ্বাস করি এ পরিস্থিতিতে কার্যক্রম বিক্রি করে দেয়ায় সবচেয়ে ভালো সমাধান।
নরওয়ের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিকম অপারেটর প্রতিষ্ঠান টেলিনর। নর্ডিক দেশগুলোর পাশাপাশি এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। তাদের ১৮ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহকের ৯৫ শতাংশই বাংলাদেশ, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং মিয়ানমারে। এর মধ্যে মিয়ানমারে রয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহক। এ সংখ্যাটি ৫ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির এক-তৃতীয়াংশ মানুষ।
মিয়ানমারে বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে টেলিনর অন্যতম বৃহৎ। এক দশক আগে সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ শুরুর পর পশ্চিমা যেকটি কোম্পানি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে বিনিয়োগ করেছে, সেগুলোর মধ্যে টেলিনরের বিনিয়োগ ছিল সর্বোচ্চ।